Category: বাংলা
রাবণের মাথা
Shakaler Sandhane
দুটি গুগল-কাব্য
First movable type in Bangla
আজ একটা বই অনলাইন আবিষ্কার করে বেশ ভাল লাগল। বইটা নেথ্যানিয়াল ব্রাসি হলহেডের “A Grammar of the Bengal Language”, ছাপা হয়েছিল হুগলীতে, ১৭৭৮ সালে। এই বইটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ এটি প্রথম বই যার মধ্যে বাংলায় মুদ্রণের প্রতিলিপি (movable type) ব্যবহার করা হয়। অক্ষরগুলো দেখতে আজ আজব লাগলেও বইটা বাংলা ভাষার ‘গুটেনবার্গ বাইবেল’ বলা যেতে পারে- এটা একটি অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ।
আমার ভাল লাগা একটা পাতা এখানে পোস্ট করলাম:
Jamai Shasthi – জামাই ষষ্ঠী, জামাই-এর স্টেটাস
নীলকন্ঠ বাণী
ওয়াটার পোচ আন্ডারে
সোনা ভরা তব ভান্ডারে
চিত্ত মম ভরিল ওয়ান্ডারে
কেন শুধু শুধু গর্জাস?
সবার চোখে “ইউ আর গর্জাস”
ঘরের বাইরে “কাই-পো-চে”
ঘরের মধ্যে ডিম পচে
নারকেল নাড়ু নাকি macaroon?
পেট কভু মানে না ব্যাকরণ
ছোটবেলা থেকে যাদের জানি
কেন সবার heat of money?
মন্টু দাসের ভাগ্না
খায় শুধু লাসাগ্না
কথাটা ‘লাজনিয়া’
মুচকি হাসে সোনিয়া
কৈ গেলি রঙ্গিলারে
পান করে টেকিলা রে?
তাঁর জুড়ি মেলা ভার
তাঁর জুরি মে লাভার
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থেকে ক্রমশ
ফায়ারফক্স সাফারি ক্রোম-ও ‘স্লো’
মোড়ক
আপনি একটা মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন “আপনি কে?”
প্রথমে মানুষটা আপনাকে তাঁর নিজের নাম জানাবেন। নাম থেকে আপনি অনেক ক্ষেত্রে মানুষটার জাত, ধর্ম, এবং অন্যান্য পারিবারিক তথ্য আন্দাজ করে নিতে পারবেন। অথচ একটা মানুষের নাম শুধু একটা মোড়ক আর সাধারণত সেই মোড়ক মনোনয়নে সেই মানুষের কোনো হাত থাকেনা কারণ, পৃথিবীতে খুব কম মানুষই বাবা-মাযের দেওয়া নাম পরিবর্তন করেন। ধর্মের ব্যাপারটাও পূর্বপুরুষ এবং পরিবেশের উপর নির্ভর করে। আমার পরিচিত কয়েকজন তাঁদের পূর্বপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করেছেন ঠিকই কিন্তু ত্যাগ করে অন্য ধর্ম অবলম্বন করেছেন খুব কম মানুষই। জন্মের ধর্ম এবং জন্মের নাগরিকত্বের সঙ্গে মানুষের বিশেষ টান থাকে।
আপনি আবার প্রশ্ন করলেন, “আপনি কে?”
মানুষটা এবার আপনাকে তাঁর পেশা জানাবেন। তিনি হয়ত গালভরা হাসি হেসে তাঁর সংস্থার নাম এবং সংস্থার দেওয়া পদ জানাবেন। শিক্ষিত মানুষ হলে তাঁর পঠন-পাঠনের বিষয় জানাতেও পারেন (বিশেষ করে যদি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ম্যানেজমেন্ট, বা স্বাস্থ্যবিদ্যা হয়)। ওয়ালেট থেকে বিজনেস কার্ড বের করে আপনাকেও দিতে পারেন। আপনি কিছুখন দেখে মানুষটার সম্পর্কে মনে একটা ধারণা সৃষ্টি করবেন।
মানুষটার কাছে বিশেষ গর্বের বিষয় হ’লে আপনাকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও শোনাতে পারেন, যেখান থেকে তাঁর স্নাতক প্রাপ্তি। অ্যাসেম্ব্লি লাইন-এ তিনিও বেরিয়েছিলেন বলে ভাত টিপে সেদ্ধ হয়েছে কিনা দেখার মতন তিনি “ভাল ছাত্র” এবং মানুষটা “ভাল”, “বুদ্ধিমান”, এবং “চরিত্রবান” আপনি মেনে নেবেন, সেটা হয়ত একটা উদ্দেশ্য। আরো মোড়ক স্থাপন করা যেতে পারে।
নিজের ঢাক নিজেই পিটিয়ে হয়ত তিনি তাঁর অর্থনৈতিক সচ্ছলতার কথা জানাতে চাইবেন আপনাকে। আজকাল কত সম্ভাব্য পাত্রই পৃথিবীকে জানাতে চান তাঁদের নিজস্ব গৃহে কত বিএইচকে, তাঁদের বেতন কত ল্যাখস পার অ্যানাম উইথ পার্ক্স। আর যদি মানুষটার চিত্র থাকে আপনার সামনে তো আপনি গোয়েন্দা ফেলু মিত্তিরের মতন পোষাক দেখে মানুষটার সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা করেও নিতে পারবেন। কুবেরের মতন ধনবান… ব্যাস ব্যাস! সহজ সূত্র। আর কী কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন আছে এই উত্তর-মার্ক্স পুঁজিদেবতার যুগে?
আপনি হয়ত তাও হাল ছাড়বেন না। আবার জানতে চাইবেন, “আপনার পরিচয় কী?”
এবার মানুষটা কিন্তু একটু বিরক্ত হবেন। বলবেন, “নাম,ধাম, পিতৃপরিচয়, স্নাতকের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, সংস্থার নাম, পদ, বেতন, বউ-বাচ্চার সংখ্যা, সবই তো দিলেন আপনাকে!”
আর মুখে না বললেও একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকবে –“এসবের বাইরে একটা মানুষের কোনো পরিচয় থাকতে পারে না।”
মুক্তি
গতকাল “মুক্তি” ছায়াছবি দেখে কিছুটা সময় ভুলে গিয়েছিলাম সে চলচ্চিত্রটা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩৭ সালে। এই ছায়াছবির জন্যে কানন দেবী যখন পঙ্কজ মল্লিকের পরিচালনায় “তার বিদায়বেলার মালাখানি” গেয়েছিলেন তখন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বেঁচে ছিলেন। আবার এই “ছায়াছবি” কথাটা অর্থপূর্ণ কেননা এই চলন্ত ছবির প্রত্যেক প্রধান চরিত্র বহু বছর মৃত। পর্দার সামনে এবং পেছনে, যাঁরা এই ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদেরও হয়ত আজ কেউ নেই। যাঁরা সিনেমা হলে দেখতে গিয়েছিলেন বা সচিত্র পোস্টার দেখেছিলেন পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলায় কোনো শহরে তাঁদেরই বা ক’জন রয়েছেন আজ?
চলচ্চিত্রের এক আশ্চর্য ক্ষমতা। সাহিত্যে, শিল্পকলায়, এমন কী সঙ্গীতেও এমন জলজ্যান্ত ছায়ামূর্তি দেখতে পাওয়া যায়না- মানুষ হাসছে, কাঁদছে, ভালবাসছে বারবার একটি নির্ধারিত নিয়মে।
কখনো কী ছায়ামূর্তিগুলোর মনে হয়না আজ সেলুলয়েড থেকে বেরিয়ে আসি? আজ দর্শকদের অভিনব এক দৃশ্য দেখাই?
ক্যাসেট
মস্তিষ্ক একপ্রকার টেপ রেকর্ডার। ক্যাসেটে শব্দ স্থাপনের জন্য যেমন চৌম্বকত্বের একান্ত প্রয়োজন, ঠিক তেমনই মস্তিষ্কের মধ্যে নিদ্রা মারফত স্মৃতি স্থাপনের জন্য দৃঢ়ীকরণের জরুরী। অনিদ্রায় নতুন স্মৃতির ভাল রেকর্ডিং হয় না। ক্যাসেট বাজালে আওয়াজ বেরোয়, হিপ্পোক্যাম্পাসের স্মৃতি কেন্দ্রের ব্যবহারে স্মৃতি উদ্ধার হয়।
জৈবিক স্তরে স্মৃতি শুধু ম্যাক্রোমলিকিউল। ম্যাক্রোমলিকিউলের মতন সীমিত আয়ু। সৃষ্টি হয়, ক্ষয়ে যায়। আবার বার বার স্মরণ করলে স্মৃতি বিকৃত হয়।
ফিতে জড়িয়ে যায়, ম্যাক্রোমলিকিউলের জট পাকিয়ে স্মৃতিভ্রম ঘটে। ঠিক যেন পুরোনো ক্যাসেট।